বগুড়ার শেরপুরে গ্রামবাসীর টাকায় সংস্কার শুরু হয়েছে খন্দকারটোলার ৮০০ মিটার সড়ক। ছবি: সবুজ চৌধুরীবগুড়ার শেরপুরে গ্রামবাসীর টাকায় সংস্কার শুরু হয়েছে খন্দকারটোলার ৮০০ মিটার সড়ক। ছবি:  

সবুজ চৌধুরীসড়কটির জায়গায় জায়গায় গর্ত। বৃষ্টি হলেই গর্তে পানি জমে যায়। সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে হয় ১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের। ছয় বছর ধরে দুর্ভোগের শিকার গ্রামবাসী প্রশাসনের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও সহযোগিতা পাননি। অবশেষে দুর্ভোগ লাঘবে গ্রামবাসী নিজেরা চাঁদা তুলে সড়কটি সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন।
বগুড়ার শেরপুরে গ্রামবাসীর টাকায় সংস্কার করা হচ্ছে ওই সড়কের একটি অংশ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। আজ বুধবার সকাল থেকে সড়কটিতে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা সড়কের একটি অংশে চলছে এই সংস্কার।
এই সংস্কারকাজে নিয়োজিত শ্রমিক খাদেমুল ইসলাম বলেন, সড়কটির অন্তত ৮০০ মিটার সংস্কার করা হচ্ছে। সড়কের এই অংশে বিগত সময়ের পিচ–পাথরের পাকা উঠে গর্ত হয়ে রয়েছে। গর্তের গভীরতা ৫ থেকে ১৮ ইঞ্চি। এই স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধ হয়ে যায়। তিনি জানান, এই অংশের দুই পাশে উঁচু করে ইটের দেয়াল তুলে তার মধ্যে অন্তত দেড় ফুট বালু ফেলা হবে। এরপর বালু ও ইটের খোয়ার মিশ্রণ ফেলে রোলার দিয়ে দাবিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে।
শাহবন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ছয় বছর ধরে সড়কটিতে যাতায়াত নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন গ্রামবাসী। সড়কে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছিল। সড়কের খানাখন্দের অংশে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তিনি উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে একাধিকবার জানিয়েও কোনো উপকার পাননি বলে জানান। শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীর টাকায় সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ বলেন, এই সড়কটি তাঁদের অধীনে। সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার সংস্কার দরকার। এ জন্য ব্যয় হবে অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে তাঁদের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু অনুমোদন না আসায় সংস্কার করাও সম্ভব হচ্ছে না।
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, এই সড়কটি সংস্কারের জন্য ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক নূরুল ইসলাম ও সদস্যসচিব খন্দকার ওসমান গণি।
কমিটির সদস্য আবদুল ওহাব বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কাজে সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু সহযোগিতা না পেয়ে গ্রামের মানুষজন এই সংস্কারের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছেন। গ্রামের মানুষজন চাঁদা তুলে গতকাল বুধবার থেকে এই সংস্কারকাজ শুরু করেছেন।
খন্দকারটোলা গ্রামের নূরুল ইসলাম বলেন, এই সড়কের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে খন্দকারটোলাসহ আরও ১২টি গ্রামের বাসিন্দা। ওই সব গ্রামের সড়কের পাশে রয়েছে ১৩টি রাইস মিল, ১৫০টির মতো চাতাল এবং ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সড়ক দিয়ে অন্তত ৩০ হাজার পরিবারকে নিয়মিত চলাচল করতে হয়।
দুজন নারী বলেন, বাড়ির কোনো নারী অসুস্থ হলে তাঁকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া সম্ভব হয় না। গ্রামবাসীর টাকায় এই সংস্কার শুরু করার মধ্যে দিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা দূর হবে।
সড়কে নিয়মিত চলাচল করে বেশ কয়েটি যানের চালক বলেন, সড়কের দুর্ভোগ রোধে তাঁরাও সড়ক সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন। এতে সড়কে চলতে গিয়ে তাঁদের যানবাহনগুলো ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন